দানের চেয়ে প্রচারই বেশি, গোপন দানই বেশি উত্তম

দানের চেয়ে প্রচারই বেশি, গোপন দানই বেশি উত্তম

মহামারি করোনা ভাইরাস বিশ্ববাসীকে এক চরম দুর্ভোগে ফেলেছে। বাংলাদেশও এর বাহিরে নয়। আমাদের দেশে বিশেষ করে মধ্যবিত্ত এবং নিন্মবিত্ত মানুষের সমস্য একটু বেশিই। আর যারা দিন আনে দিন খায় তাদের নিদরুন কষ্টের কথা বলার মত নয়। এটা পুরো বাংলাদেশের চিত্র। এই সমস্য মোকাবিলা করার জন্য অনেক বিত্তবান ব্যক্তি তাদের নিজস্ব উদ্যোগে সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এটা অবশ্যই একটা ভালো দিক। কিন্তু অধিকাংশই ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, তারা দানের চেয়ে প্রচারই বেশি করছেন। কেউ করছেন ফেসবুক লাইভে, কেউ আবার ইউটিউব লাইভে, কেউ ছবি তুলে পত্রিকায় দিয়ে, আবার অনেকেই অদ্ভুত সব প্রচারের পথ অবলম্বন করছেন। সেগুলোকে মানুষ ভালোভাবে গ্রহণ করছে না। মনে রাখতে হবে, দান একটা বড় ইবাদত। আর এই ইবাদত যদি লোক দেখানোর উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে সেটাকে বলে রিয়া। রিয়া অর্থ লোক দেখানো। আর আল্লাহ তায়ালা রিয়াকারীকে পছন্দ করেন না।

যেহেতু বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ দিন দিন বেড়েই চলেছে। যার ফলে মধ্যবিত্ত এবং নিন্মবিত্ত মানুষদের অভাবও বাড়ছে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত মানুষের মধ্য এমন এমনও মানুষ রয়েছে যারা কোন দিন মানুষের দান/সাহায্য গ্রহণ করেনি এবং কারো সাহায্য নিতে সংকোচবোধ করেন। তারা যদি নিজেদের বাঁচার তাগিদে কারো দান বা সাহায্য গ্রহণ করেন, আর সেই দানকারী যদি সেইটার ভিডিও করেন তার প্রচারমুলক স্বভাবনুযায়ী তাহলে নিশ্চয় সেই বিষয়টি দৃষ্টিকটু দেখায়। এবং সেইটার সামজিক প্রভাব পরবর্তীতে দানগ্রহীতার উপর পরতে পারে। যেটা নিশ্চয় একজন মানুষ হিসেবে কাম্য নয়।

দান প্রকাশ্য করার চেয়ে গোপনে দান করাই উত্তম। বিশেষ করে, ব্যক্তিগতভাবে দান প্রকাশ্যে করার চেয়ে গোপনে করা বেশি উত্তম। কিন্তু সরকারিভাবে বা কোন প্রতিষ্ঠানের দান প্রকাশ্যে এবং প্রচার সহকারে করা দরকার, সেখানেও অতি বাড়াবাড়ি সহকারে প্রচার করা না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, এক কেজি চাল দশজন মিলে একজন কে দান করছেন শুধুমাত্র ছবি তুলে প্রচার করার জন্য। এমনটা হওয়া অবশ্যই উচিত নয়। আর দান করতে হবে মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্য নয়, আল্লাহকে খুশি করার উদ্দেশ্য।     

গরিব অসহায়দের মাঝে শুধুমাত্র অর্থ সম্পদ বিলিয়ে দেয়ার নামই দান নয়, বরং প্রতিটি ভালো কাজই একটি দান। হাদিসে এসেছে, প্রত্যেক সৎকাজই একটি দান। তুমি তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসি মুখে সাক্ষাৎ করবে এবং তোমার ভাইয়ের পানির পাত্রে তোমার বালতি থেকে (পানি) ঢেলে দেবে; এটাও সৎকাজ (সুতরাং এটাও দান)। গোপনে দানের ফজিলত সম্পর্কে আমাদের জানা দরকার। তাহলে হয়তো আমরা লোক দেখানো দান করা থেকে বিরত থাকতে পারি। যে ব্যক্তি অতি গোপনে দান করবে, তার জন্য রয়েছে অনেক বড় নিয়ামাত। গোপনে দানের ফজিলত সম্পর্কিত দুটি হাদিস তুলে ধরছি-

০১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন আল্লাহর ছায়া ব্যতিত কোনো ছায়া থাকবে না, তখন আল্লাহ তাআলা সাত শ্রেণির লোককে তাঁর (আরশের) ছায়া দান করবেন। (তাদের মধ্যে একজন হলো) যে ব্যক্তি এতো গোপনে সাদকাহ বা দান করে যে, ডান হাত যা দান করে, বাম হাত তা টের পায় না।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ)

০২. হজরত বাহয ইবনে হাকিম হতে বর্ণিত তিনি তার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘গোপন দান বরকতময় আল্লাহ তাআলার ক্রোধ নিপতিত করে।’ (তাবরানি, তারগিব)

উপরোক্ত হাদিসদ্বয়ে বর্ণিত ফজিলত লাভে দানের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা অবলম্বন করা অতিব জরুরি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে গরিব ও অসহায়দের মাঝে অতি গোপনে দান করার এবং রিয়া বা লোক দেখানো প্রচারমুলক দান করা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Tags: Blogs

Md. Forhad Reza

I am Md. Forhad Reza from Bogura and student of Sociology at a public university of Bangladesh. I just find myself happy with the simple things.

Post a Comment

0 Comments

Skip to main content